মধ্যপ্রাচ্যে শান্তি স্থাপনের নতুন উদ্যোগ হিসেবে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ২০ দফা গাজা শান্তি পরিকল্পনা উপস্থাপন করেছেন। ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর সঙ্গে হোয়াইট হাউসে সভার পর এই প্রস্তাব প্রকাশ করা হলো। নেতানিয়াহু পরিকল্পনাটি সমর্থন করেছেন, তবে হামাসের সম্মতি এখনও অপেক্ষমান।
প্রস্তাবের মূল বিষয়টি হলো তাৎক্ষণিক যুদ্ধবিরতি। ট্রাম্প জানিয়েছেন, উভয় পক্ষ সম্মত হলেই গাজায় সব ধরনের সামরিক অভিযান বন্ধ হবে। ৭২ ঘণ্টার মধ্যে হামাসের হাতে থাকা সব জিম্মি—জীবিত ও মৃত—ফেরত দিতে হবে। এর বিনিময়ে ইসরায়েল শত শত ফিলিস্তিনি বন্দিকে মুক্তি দেবে বলে পরিকল্পনায় উল্লেখ আছে ।
জিম্মি বিনিময়ের ক্ষেত্রে প্রস্তাবে বলা হয়েছে, প্রতিটি ইসরায়েলি জিম্মির মরদেহের বিনিময়ে ১৫ জন মৃত ফিলিস্তিনির দেহ ফেরত দেওয়া হবে। জীবিত ২০টি জিম্মি এবং ২৮টি মরদেহ ফেরতের বিপরীতে ২৫০ জন যাবজ্জীবন দণ্ডপ্রাপ্ত এবং ১,৭০০ জন গাজার বন্দিকে ছাড়ার কথা রয়েছে ।
হামাসের নিরস্ত্রীকরণ ও গাজার ভবিষ্যৎ শাসন নিয়ে স্পষ্ট নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। হামাসকে সব অস্ত্র সমর্পণ, টানেল ও অস্ত্র কারখানা ধ্বংস করতে হবে। গাজার শাসনভার সম্পূর্ণভাবে একটি অরাজনৈতিক ফিলিস্তিনি টেকনোক্র্যাট কমিটির হাতে থাকবে, যেখানে হামাসের কোনো ভূমিকা থাকবে না ।
আন্তর্জাতিক তদারকির জন্য ‘বোর্ড অব পিস’ নামে একটি নতুন সংস্থা গঠনের কথা বলা হয়েছে, যার নেতৃত্বে থাকবেন স্বয়ং ট্রাম্প। এতে যুক্ত হবেন ব্রিটেনের সাবেক প্রধানমন্ত্রী টনি ব্লেয়ারসহ অন্যান্য আন্তর্জাতিক নেতারা। আরব দেশগুলোর সৈন্য নিয়ে গঠিত একটি আন্তর্জাতিক স্থিতিশীলতা বাহিনী গাজায় নিরাপত্তার দায়িত্ব নেবে ।
ইসরায়েলি বাহিনীর প্রত্যাহার পর্যায়ক্রমে হবে। প্রথমে জিম্মি মুক্তির পর নির্ধারিত লাইন পর্যন্ত পিছিয়ে যাবে আইডিএফ। তবে আন্তর্জাতিক স্থিতিশীলতা বাহিনী প্রস্তুত না হওয়া পর্যন্ত ইসরায়েল গাজার একটি বড় অংশে নিরাপত্তা বলয় বজায় রাখতে পারবে বলে পরিকল্পনায় উল্লেখ রয়েছে ।
প্রস্তাবে গাজার পুনর্গঠনে বিশাল বিনিয়োগের কথা বলা হয়েছে। তাৎক্ষণিক মানবিক সাহায্য পৌঁছানো, অবকাঠামো মেরামত এবং গাজাবাসীর জন্য ‘সন্ত্রাসমুক্ত অঞ্চল’ তৈরি করার উপর গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। পরিকল্পনায় স্পষ্ট করা হয়েছে, ইসরায়েল গাজা দখল বা সংযুক্ত করবে না ।
যেসব হামাস সদস্য শান্তিপূর্ণ সহাবস্থানে রাজি হয়ে নিরস্ত্র হবে, তাদের জন্য সাধারণ ক্ষমার ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। যারা গাজা ছেড়ে যেতে চান, তাদের জন্য নিরাপদ পথের গ্যারান্টি দেওয়া হয়েছে ।
নেতানিয়াহু পরিকল্পনাটি সমর্থন করে বলেছেন, এটি ইসরায়েলের যুদ্ধলক্ষ্য অর্জনে সহায়ক। তবে তিনি সতর্ক করেছেন, হামাস প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করলে ইসরায়েল নিজেই ‘কাজ শেষ করবে।’ ট্রাম্পও বলেছেন, হামাস না মানলে ইসরায়েলকে পূর্ণ সমর্থন দেবে আমেরিকা ।
আরব দেশগুলো প্রস্তাবটিকে স্বাগত জানিয়েছে। কাতার, মিশর, জর্দান, সৌদি আরব, সংযুক্ত আরব আমিরাত, ইন্দোনেশিয়া, তুরস্ক ও পাকিস্তানের পররাষ্ট্রমন্ত্রীরা যৌথ বিবৃতিতে পরিকল্পনাকে স্বাগত জানিয়েছেন। ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষও ট্রাম্পের উদ্যোগের প্রশংসা করেছে ।
তবে হামাসের পক্ষ থেকে প্রাথমিক প্রতিক্রিয়া মিশ্র। একজন হামাস কর্মকর্তা এএফপিকে জানিয়েছেন, তারা এখনো লিখিত প্রস্তাব পায়নি এবং পেলে ‘ভালো বিশ্বাসে’ পর্যালোচনা করে জবাব দেবে। তবে ফিলিস্তিনি ইসলামিক জিহাদ প্রস্তাবটিকে ‘অঞ্চলে উত্তেজনা বাড়ানোর রেসিপি’ বলে সমালোচনা করেছে ।
কূটনৈতিক মহলের মতে, প্রায় দুই বছরের যুদ্ধের পর এই প্রস্তাব একটি গুরুত্বপূর্ণ মোড়। হামাসের সম্মতি পেলে মধ্যপ্রাচ্যে শান্তির নতুন সম্ভাবনা তৈরি হতে পারে। তবে হামাস ঐতিহাসিকভাবে নিরস্ত্রীকরণে অনীহা প্রকাশ করেছে, যা এই পরিকল্পনার সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হতে পারে।
