সম্পাদনা ও প্রকাশনা: ফাহাদ কবীর, তরুণ বার্তা।
রাস্তার ধারের গরম গরম সিঙাড়া, ফুলুরি বা আলুর চপ হোক, কিংবা বাড়িতে তৈরি তেল-মশলাদার খাবার—খবরের কাগজে মুড়ে পরিবেশন করাটা আমাদের অনেকের কাছেই যেন এক স্বাভাবিক অভ্যাস। সহজলভ্যতা এবং ব্যবহারের সুবিধা এটিকে নিত্যদিনের অভ্যাসে পরিণত করেছে। তবে এই আপাত-নিরীহ অভ্যাসটি যে আমাদের স্বাস্থ্যের জন্য এক গভীর ও অলক্ষিত বিষের সৃষ্টি করছে, সে বিষয়ে সচেতন হওয়া অত্যন্ত জরুরি।
খবরের কাগজ কোনোভাবেই খাদ্য-গ্রেড উপাদান নয়। এটি নিম্নমানের পুনর্ব্যবহৃত পাল্প থেকে তৈরি হয় এবং এতে এমন সব ক্ষতিকারক রাসায়নিক ব্যবহার করা হয়, যা খাদ্যের সংস্পর্শে আসা উচিত নয়। মূলত দুটি কারণে খবরের কাগজে খাবার রাখা অত্যন্ত বিপজ্জনক:
প্রথমত, খবরের কাগজের কালিতে থাকে বিভিন্ন ধরনের ক্ষতিকর রাসায়নিক উপাদান, যা মানবদেহের জন্য বিষাক্ত। এগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো-মিনারেল অয়েল যা খাবারের চর্বি বা তেল শোষণ করে সহজে খাবারের সাথে মিশে যায়। আবার,ভারী ধাতু সীসা এবং ক্যাডমিয়ামের মতো মারাত্মক ধাতু উপস্থিত থাকে। এতে উপস্থিত বাইফিনল একটি এন্ডোক্রাইন ডিসরাপ্টর বা হরমোনের ভারসাম্য নষ্টকারী বিষাক্ত উপাদান।
দ্বিতীয়ত, যখন গরম বা তেলচিটে খাবার খবরের কাগজের সংস্পর্শে আসে, তখন খাবারের তেল বা চর্বি দ্রাবক হিসেবে কাজ করে। এই তেল কাগজের কালিতে লুকিয়ে থাকা সমস্ত বিষাক্ত রাসায়নিক উপাদানকে টেনে বের করে আনে এবং সরাসরি খাবারের সাথে মিশিয়ে দেয়। আমরা যখন সেই খাবার খাই, তখন অজান্তেই এই বিষাক্ত রাসায়নিকগুলো আমাদের শরীরে প্রবেশ করে।

দীর্ঘদিন ধরে এইভাবে দূষিত খাবার গ্রহণ করলে তা মানবদেহে ধীরে ধীরে জমা হতে থাকে এবং গুরুতর স্বাস্থ্যঝুঁকির সৃষ্টি করে। এর ফলে সৃষ্ট কিছু জটিল সমস্যার অন্যতম হলো ক্যান্সার ।কালির রাসায়নিক উপাদানগুলো কার্সিনোজেনিক বা ক্যান্সার সৃষ্টিকারী হতে পারে। এসব রাসায়নিক উপাদান লিভার এবং কিডনির মতো গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ-প্রত্যঙ্গের মারাত্মক ক্ষতি করতে পারে। বিপিএ-এর মতো উপাদান শরীরে হরমোনের স্বাভাবিক কাজে বাধা সৃষ্টি করে। সীসার মতো ভারী ধাতু স্নায়ুতন্ত্রের ওপর ক্ষতিকর প্রভাব ফেলতে পারে।
নিরাপদ বিকল্পই একমাত্র পথ।আমাদের পরিবার এবং নিজেদের স্বাস্থ্য সুরক্ষার জন্য এই ক্ষতিকারক অভ্যাসটি পরিহার করা অত্যাবশ্যক। খাদ্য-গ্রেড উপকরণ ব্যবহার করাই হলো একমাত্র নিরাপদ বিকল্প।
খাবারের জন্য ব্যবহার করা যেতে পারে বেকিং পেপার বা পার্চমেন্ট পেপার, অ্যালুমিনিয়াম ফয়েল।
খবরের কাগজে খাবার পরিবেশন বা মুড়ে নেওয়া থেকে বিরত থাকা এক প্রকার সচেতনতামূলক প্রতিরোধ, যা আমাদের পরিবারকে এই ‘অলক্ষিত বিষ’ থেকে রক্ষা করতে পারে। সুস্থ থাকতে হলে, আমাদের খাদ্যাভ্যাসে এই ছোট পরিবর্তনটি আনা আজ সময়ের দাবি।
লেখক: ফাহাদ কবীর,
তরুণ বার্তার অভিজ্ঞ কন্টেন্ট রাইটার।তার অন্যান্য রচনাসমূহ দেখতে এখানে ক্লিক করুন - ফাহাদ কবীর।

2 Comments
এদিকে প্লাস্টিকের প্যাকেট ব্যবহারে ফলে শরীরের মাইক্রোপ্লাস্টিক পাওয়া যাচ্ছে।
থর্মোকলে পরিবেশ দূষণ।
দেশের আনাচে কানাচে যত ফাঁকা জায়গা আছে কচু চাষ করা উচিত… 😅
👌👌