International Booker Prize বিজয়ী লেখিকা Banu Mushtaq আজ শুধু একটি সাহিত্যিক পুরস্কারের জন্য নয়, ভারতের ধর্মনিরপেক্ষতার প্রকৃত মানসিকতা উন্মোচনের জন্য আলোচিত হচ্ছেন। কর্নাটকের মাইসুরু দশরা উৎসবের উদ্বোধক হিসেবে তাঁর মনোনয়ন কি আসলেই ভারতের গণতান্ত্রিক মূল্যবোধের পরীক্ষা নিচ্ছে?
সূচীপত্র
Banu Mushtaq: কে এই নারী যিনি দেশের বিবেককে নাড়িয়ে দিলেন?
Banu Mushtaq শুধু একজন আন্তর্জাতিক পুরস্কার বিজয়ী লেখিকা নন—তিনি একজন আইনজীবী, সাংবাদিক এবং নারী অধিকারের কর্মী। তাঁর “Heart Lamp” গ্রন্থে দক্ষিণ ভারতের মুসলিম নারীদের সংগ্রামের গল্প রয়েছে, যা বিশ্বব্যাপী প্রশংসিত হয়েছে।
কিন্তু আজ তিনি “কর্নাটকের গর্ব” থেকে হয়ে উঠেছেন “বিতর্কিত মুসলিম নারী”। এই পরিবর্তনের পেছনে রয়েছে গভীর মানসিক সংকীর্ণতা যা আমাদের সমাজের আসল চেহারা তুলে ধরে।
ধর্মনিরপেক্ষতার নামে চলছে কোন খেলা?
ভারতের সংবিধানে ধর্মনিরপেক্ষতা একটি মৌলিক বৈশিষ্ট্য। কিন্তু Banu Mushtaq-এর ঘটনা প্রমাণ করে যে এই ধর্মনিরপেক্ষতা কেবল কাগজে—বাস্তবে ধর্মীয় সংখ্যাগরিষ্ঠতার আধিপত্যই চলে।
সুপ্রিম কোর্ট যখন বলে “এদেশের প্রস্তাবনা কী?” তখনই বোঝা যায় আমাদের গণতন্ত্রের ভিত্তি কতটা দুর্বল।
প্রশ্ন ১: কেন একজন আন্তর্জাতিক পুরস্কার বিজয়ী “যোগ্য” নন?
যখন Banu Mushtaq International Booker Prize জিতেছিলেন, তখন তিনি ছিলেন “কর্নাটকের গর্ব”। কিন্তু যেই তাঁকে দশরা উদ্বোধনের জন্য আমন্ত্রণ জানানো হলো, সেই মুহূর্তে তিনি হয়ে গেলেন “অযোগ্য মুসলিম”।
এই দ্বিচারিতা কি আমাদের মানসিক দেউলিয়াত্বের প্রমাণ নয়? একজন ব্যক্তি যখন পুরস্কার জেতেন তখন তাঁর ধর্ম দেখা হয় না, কিন্তু যখন সম্মান করার পালা আসে তখনই ধর্ম মূল বিষয় হয়ে ওঠে।
প্রশ্ন ২: ধর্মীয় উৎসব নাকি সাংস্কৃতিক উৎসব – আসল পরিচয় কী?
মাইসুরু দশরা নিয়ে দ্বিমুখী নীতি চোখে পড়ার মতো। যখন সরকারি অনুদান নেওয়ার প্রয়োজন, তখন এটি “নাদা হাব্বা” (রাজ্যের উৎসব)। কিন্তু যখন Banu Mushtaq-এর মতো মুসলিম ব্যক্তিত্বকে আমন্ত্রণ জানানোর প্রশ্ন, তখনই এটি হয়ে যায় “চামুণ্ডেশ্বরী দেবীর পবিত্র উৎসব”।
এই সুবিধামত ব্যাখ্যা কি আমাদের ধর্মনিরপেক্ষতার দুর্বলতা প্রকাশ করে না?
প্রশ্ন ৩: ২০১৭ সালে নিসার আহমেদ যেতে পারলে এখন কেন পারবেন না?
২০১৭ সালে কবি কে এস নিসার আহমেদ একই উৎসব উদ্বোধন করেছিলেন। তখন কোনো প্রতিবাদ হয়নি। এখন Banu Mushtaq নিয়ে এত মাতামাতি কেন?
উত্তর সহজ—বর্তমান রাজনৈতিক পরিবেশে ধর্মীয় মেরুকরণ আরও তীব্র হয়েছে। আমাদের সহনশীলতা ক্রমাগত সংকুচিত হচ্ছে।
প্রশ্ন ৪: “অ্যান্টি-হিন্দু” বিবৃতির অভিযোগ কতটা সত্য?
Banu Mushtaq-এর বিরুদ্ধে প্রধান অভিযোগ তিনি নাকি ভুবনেশ্বরী দেবী ও কন্নড় পতাকার হলুদ-লাল রঙ নিয়ে “আপত্তিকর” মন্তব্য করেছেন। তিনি বলেছিলেন, কন্নড় ভাষাকে হিন্দু দেবীর রূপ দিলে সংখ্যালঘুরা বাদ পড়ে যায়।
এই বক্তব্য কি “অ্যান্টি-হিন্দু” নাকি সমতার পক্ষে? যে লেখিকা সারাজীবন মুসলিম মৌলবাদীদের বিরুদ্ধে লড়েছেন, নারী অধিকারের জন্য ফতোয়ার মুখে পড়েছেন, তিনি কি আসলেই কোনো ধর্মের বিরুদ্ধে?
প্রশ্ন ৫: আমাদের মানসিকতায় কী পরিবর্তন এসেছে? আমরা কোন দিকে যাচ্ছি?
গত দশকে ভারতে সাম্প্রদায়িক ঘটনার সংখ্যা উল্লেখযোগ্যভাবে বেড়েছে। কর্নাটকের উপকূলীয় অঞ্চলেই ২০২৪ সালে ৪৮টি সাম্প্রদায়িক ঘটনা ঘটেছে, যার বেশিরভাগ হিন্দু কট্টরপন্থীদের দ্বারা।
Banu Mushtaq কেস এই বড় ছবিরই অংশ—যেখানে ধর্মীয় পরিচয়ই একমাত্র যোগ্যতার মাপকাঠি হয়ে উঠেছে।
প্রশ্ন ৬: সুপ্রিম কোর্টের রায়ের পরেও বিতর্ক কেন থামেনি?
সুপ্রিম কোর্ট স্পষ্ট রায় দিয়েছে যে Banu Mushtaq উৎসব উদ্বোধন করতে পারবেন। কিন্তু রাজনৈতিক দলগুলো এই বিষয়কে ভোটের হাতিয়ার বানাতে চায়।
প্রশ্ন ৭: এর শেষ কোথায়?
আজ Banu Mushtaq, কাল অন্য কেউ। এভাবে ক্রমাগত ধর্মীয় পরিচয়ে মানুষকে বিচার করলে আমাদের গণতন্ত্রের ভবিষ্যৎ কী?
বাস্তবতার কঠোর সত্য
Banu Mushtaq কেস আমাদের সামনে আয়না ধরে দিয়েছে। আমরা যে ধর্মনিরপেক্ষতার দাবি করি, তা আসলে কেবল সংখ্যাগরিষ্ঠের সুবিধানুযায়ী ব্যাখ্যিত হয়।
একজন নারী, যিনি সারাজীবন সামাজিক ন্যায়বিচারের জন্য লড়েছেন, আন্তর্জাতিক পর্যায়ে দেশের সম্মান বৃদ্ধি করেছেন, তাঁকেই আজ প্রমাণ করতে হচ্ছে তিনি “দেশদ্রোহী” নন।
এই মানসিকতা দিনদিন আরও সংকীর্ণ হচ্ছে। যে দেশে একসময় “বসুধৈব কুটুম্বকম্” এর আদর্শ ছিল, সেই দেশেই আজ একজন বুকার পুরস্কার বিজয়ী লেখিকার “ধর্মীয় যোগ্যতা” প্রশ্নবিদ্ধ হচ্ছে।
অবশ্যই পড়ুন : PhD করা ছাত্র Umar Khalid রিমান্ডে, অপরাধী বাবা রাম রহিম বারবার প্যারোলে মুক্তি পাচ্ছেন—ন্যায়বিচার কি দুই মুখো?
চোখ রাখুন তরুণ বার্তার অফিসিয়াল ফেসবুক পেজে : তরুণ বার্তা (torunbarta)
