সূচিপত্র
ভারত গত ২৪ সেপ্টেম্বর ২০২৫ তারিখে রেল-ভিত্তিক মোবাইল লঞ্চার থেকে Agni Prime Missile এর সফল পরীক্ষা সম্পন্ন করে প্রতিরক্ষা ক্ষেত্রে একটি ঐতিহাসিক মাইলফলক অর্জন করেছে। এই প্রথমবারের মতো ভারত এমন একটি বিশেষভাবে ডিজাইন করা রেল-ভিত্তিক মোবাইল প্ল্যাটফর্ম থেকে ক্ষেপণাস্ত্র উৎক্ষেপণে সফল হয়েছে, যা দেশটিকে বিশ্বের একটি নির্বাচিত দেশের তালিকায় নিয়ে গেছে।
ভারতের প্রতিরক্ষা ক্ষমতায় নতুন মাত্রা
প্রতিরক্ষামন্ত্রী রাজনাথ সিং এক্স (সাবেক টুইটার) প্ল্যাটফর্মে এই সাফল্যের ঘোষণা দিতে গিয়ে বলেছেন যে এই পরীক্ষা ভারতকে “নির্বাচিত দেশগুলির গ্রুপে” স্থান দিয়েছে যারা রেল নেটওয়ার্ক থেকে ক্যানিস্টারাইজড লঞ্চ সিস্টেম তৈরি করতে পারে।
DRDO (প্রতিরক্ষা গবেষণা ও উন্নয়ন সংস্থা) এবং স্ট্র্যাটেজিক ফোর্সেস কমান্ডের (SFC) সহযোগিতায় পরিচালিত এই পরীক্ষা সম্পূর্ণ অপারেশনাল পরিস্থিতিতে সম্পন্ন হয়েছে। পরীক্ষার সময় ক্ষেপণাস্ত্রের গতিপথ বিভিন্ন গ্রাউন্ড স্টেশন দ্বারা ট্র্যাক করা হয় এবং সমস্ত মিশনের উদ্দেশ্য পূরণ হয়েছে।
Agni Prime Missile: রেল-ভিত্তিক লঞ্চারের বিশেষত্ব
এই বিশেষভাবে ডিজাইন করা রেল-ভিত্তিক মোবাইল লঞ্চারের রয়েছে অসাধারণ কিছু ক্ষমতা:
ক্রস-কান্ট্রি মোবিলিটি: এই সিস্টেমটি কোনো পূর্বশর্ত ছাড়াই রেল নেটওয়ার্কে চলাচল করতে পারে, যা সশস্ত্র বাহিনীকে দেশব্যাপী দ্রুত মোতায়েনের সুবিধা দেয়।
দ্রুত প্রতিক্রিয়া: স্বল্প প্রতিক্রিয়া সময়ে উৎক্ষেপণ করার ক্ষমতা রয়েছে এই সিস্টেমের।
কম দৃশ্যমানতা: শত্রুর নজরদারি এড়িয়ে চলার জন্য এই প্ল্যাটফর্মের দৃশ্যমানতা অনেক কম।
স্বয়ংসম্পূর্ণতা: অত্যাধুনিক যোগাযোগ ব্যবস্থা এবং সুরক্ষা ব্যবস্থাসহ স্বাধীন উৎক্ষেপণ ক্ষমতার সকল বৈশিষ্ট্য রয়েছে।
Agni Prime Missile এর প্রযুক্তিগত বৈশিষ্ট্য
Agni Prime Missile হলো ভারতের পরবর্তী প্রজন্মের ইন্টারমিডিয়েট রেঞ্জ ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র:
রেঞ্জ ও ক্ষমতা: এই ক্ষেপণাস্ত্রের আঘাত পাল্লা রয়েছে ২০০০ কিলোমিটার পর্যন্ত, যা পাকিস্তান এবং চীনের অনেক গুরুত্বপূর্ণ লক্ষ্যবস্তুতে আঘাত হানতে সক্ষম।
উন্নত প্রযুক্তি: এতে রয়েছে উন্নত নির্দেশনা ব্যবস্থা, উচ্চ নির্ভুলতা এবং ক্যানিস্টারাইজড কনফিগারেশন।
দ্বি-পর্যায়ের কাঠামো: এটি একটি দ্বি-পর্যায়ের কঠিন জ্বালানিচালিত ক্ষেপণাস্ত্র যা আধুনিক প্রপেলান্ট এবং কমপোজিট মোটর ক্যাসিং ব্যবহার করে।
মাল্টি-প্ল্যাটফর্ম উৎক্ষেপণ: সড়কভিত্তিক এবং রেলভিত্তিক উভয় প্ল্যাটফর্ম থেকে উৎক্ষেপণ করা যায় এই ক্ষেপণাস্ত্র।
আন্তর্জাতিক প্রসঙ্গে ভারতের অবস্থান
এই সফল পরীক্ষার মাধ্যমে ভারত এমন কয়েকটি দেশের তালিকায় যোগ দিয়েছে যাদের রেল-ভিত্তিক মোবাইল ক্ষেপণাস্ত্র উৎক্ষেপণের প্রযুক্তি রয়েছে। এর আগে মূলত রাশিয়া, চীন এবং আমেরিকা এ ধরনের উন্নত ক্ষমতার অধিকারী ছিল।
প্রতিরক্ষা বিশেষজ্ঞ সন্দীপ উনিথান বলেছেন যে এই পরীক্ষা একধরনের কৌশলগত সংকেত। তিনি উল্লেখ করেছেন যে এমন পরীক্ষা “অঞ্চলের প্রতিপক্ষদের কাছে সংকেত পাঠায়, যা চীন এবং পাকিস্তান উভয়কেই বোঝায়, যে ভারতের রয়েছে পাল্লা এবং ক্ষমতা”।
এই Agni Prime Missile টেস্ট ভারতের “মিশন সুদর্শন চক্র” এর অংশ, যা একটি বহুস্তরীয় ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা গড়ে তোলার লক্ষ্যে পরিচালিত হচ্ছে। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি স্বাধীনতা দিবসের ভাষণে এই প্রকল্পের কথা ঘোষণা করেছিলেন, যার লক্ষ্য ২০৩৫ সালের মধ্যে ভারতের সমস্ত গুরুত্বপূর্ণ স্থানকে সম্পূর্ণ নিরাপত্তা কবচের আওতায় আনা।
ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা ও প্রভাব
এই সফল পরীক্ষার ফলে ভবিষ্যতে রেল-ভিত্তিক ক্ষেপণাস্ত্র সিস্টেমের সেনাবাহিনীতে অন্তর্ভুক্তির পথ সুগম হয়েছে। DRDO এর বিজ্ঞানীরা জানিয়েছেন যে এই প্রযুক্তি ভবিষ্যতে Agni সিরিজের অন্যান্য ক্ষেপণাস্ত্রেও প্রয়োগ করা যেতে পারে।
রেল-ভিত্তিক এই সিস্টেম ভারতের প্রতিরক্ষা ক্ষমতায় যে বিপ্লব আনবে তা হলো:
বর্ধিত জীবিত থাকার ক্ষমতা: শত্রুর প্রাথমিক আক্রমণ থেকে বেঁচে থেকে পাল্টা আঘাত হানার ক্ষমতা বৃদ্ধি পেয়েছে।
কৌশলগত নমনীয়তা: দ্রুত স্থান পরিবর্তনের মাধ্যমে শত্রুর আক্রমণ এড়িয়ে চলার ক্ষমতা।
দ্বিতীয় আঘাতের নিশ্চয়তা: পারমাণবিক নিরোধের ক্ষেত্রে “দ্বিতীয় আঘাত” এর ক্ষমতা আরও শক্তিশালী হয়েছে।
ইতিমধ্যে সড়কভিত্তিক Agni-P সেনাবাহিনীতে অন্তর্ভুক্ত হয়েছে একাধিক সফল পরীক্ষার পর। আগস্ট মাসে চাঁদিপুর, ওড়িশা থেকে এই ক্ষেপণাস্ত্রের আরেকটি সফল পরীক্ষা হয়েছিল।
প্রতিরক্ষা বিশ্লেষকদের মতে, এই Agni Prime Missile এর সফল পরীক্ষা শুধু ভারতের প্রতিরক্ষা ক্ষমতা বৃদ্ধিই করেনি, বরং আঞ্চলিক শক্তি ভারসাম্যেও গুরুত্বপূর্ণ প্রভাব ফেলবে। চীন ও পাকিস্তানের ক্রমবর্ধমান ক্ষেপণাস্ত্র হুমকির মোকাবিলায় ভারতের এই অগ্রগতি একটি কার্যকর নিরোধক হিসেবে কাজ করবে।
এই ঐতিহাসিক সাফল্য ভারতের আত্মনির্ভর প্রতিরক্ষা উৎপাদনের দিকে আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ এবং দেশের জাতীয় নিরাপত্তাকে আরও শক্তিশালী করে তুলেছে।
অবশ্যই পড়ুন : ভবিষ্যৎ প্রজন্মের ভবিষ্যৎ কোথায়? – তরুণ বার্তা
বহিঃসূত্র: প্রতিরক্ষা মন্ত্রক অফিসিয়াল বিবৃতি
