কাঠমাণ্ডুর রাস্তায় এক অভূতপূর্ব দৃশ্যের অবতারণা হয়েছে। নেপালের তরুণ সমাজ, বিশেষ করে Gen Z প্রজন্ম, সরকারের social media ban ও ব্যাপক দুর্নীতির বিরুদ্ধে রাস্তায় নেমেছে। এই Nepal Gen Z protests এ পুলিশের সাথে সংঘর্ষে অন্তত ১৪ জন নিহত ও শতাধিক আহত হয়েছে।
সেপ্টেম্বর ৮ তারিখ সোমবার সকাল ৯টা থেকে শুরু হওয়া এই আন্দোলনের কেন্দ্রবিন্দু মৈতিঘর এলাকায় হাজার হাজার তরুণ-তরুণী একত্রিত হয়ে সংসদ ভবনের দিকে মিছিল বের করে। অনেকেই স্কুল-কলেজের ইউনিফর্ম পরে এসেছিল, যা এই আন্দোলনের তরুণ প্রজন্মভিত্তিক চরিত্র প্রমাণ করে।
Social Media Ban: নেপালে ডিজিটাল নীরবতা

নেপাল সরকার ৪ সেপ্টেম্বর থেকে Facebook, Instagram, WhatsApp, YouTube, X, LinkedIn সহ মোট ২৬টি social media platform নিষিদ্ধ ঘোষণা করে। এই social media ban এর কারণ হিসেবে সরকার জানিয়েছে যে, এসব প্ল্যাটফর্ম নেপালের যোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের নির্ধারিত সময়সীমার মধ্যে নিবন্ধন করেনি।
নিয়মানুযায়ী, social media কোম্পানিগুলোকে নেপালে স্থানীয় অফিস স্থাপন, যোগাযোগকারী ব্যক্তি নিয়োগ এবং অভিযোগ নিষ্পত্তির ব্যবস্থা রাখতে হতো। কিন্তু Meta (Facebook-Instagram), Alphabet (YouTube), X কর্পোরেশন কোনো আবেদন জমা দেয়নি।
Gen Z এর ক্ষোভের মূল কারণ
Nepal Gen Z protests শুধুমাত্র social media ban নিয়ে নয়। এর পেছনে রয়েছে দীর্ঘদিনের পুঞ্জীভূত ক্ষোভ। নেপালের তরুণ প্রজন্ম যেসব বিষয়ে ক্ষুব্ধ:
দুর্নীতি ও Nepo Kids সংস্কৃতি
Gen Z তরুণরা রাজনৈতিক পরিবারের সন্তানদের বিলাসবহুল জীবনযাত্রা নিয়ে তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ করেছে। Nepo Kids (Nepotism Kids) ট্রেন্ড TikTok ও Reddit-এ ভাইরাল হয়েছিল, যেখানে রাজনীতিবিদদের সন্তানদের বিদেশি গাড়ি, ব্র্যান্ডেড পোশাক ও বিলাসবহুল ছুটির ছবি দেখানো হয়েছে।
“নেতাদের সন্তানরা গুচ্চি ব্যাগ নিয়ে বিদেশ থেকে ফেরে, আর জনগণের সন্তানরা কফিনে ফেরে” – এমন প্ল্যাকার্ড নিয়ে বিক্ষোভকারীরা রাস্তায় নেমেছিল।
অর্থনৈতিক অসমতা ও যুব বেকারত্ব
নেপালে ১৫-২৯ বছর বয়সীদের মধ্যে বেকারত্ব ১৯.২%। দেশের গড় বার্ষিক আয় মাত্র ১,৩০০ ডলার, কিন্তু রাজনৈতিক পরিবারের সন্তানরা বিদেশে উচ্চ শিক্ষা ও বিলাসবহুল জীবনযাত্রার সুবিধা ভোগ করছে।
Remittance নির্ভরতা ও Social Media এর গুরুত্ব
নেপালের GDP-র ৩৩.০৬% আসে বিদেশি শ্রমিকদের পাঠানো রেমিট্যান্স থেকে। প্রায় ৭০ লাখের বেশি নেপালি বিদেশে কাজ ও পড়াশোনা করেন। Social media তাদের পরিবারের সাথে যোগাযোগের প্রধান মাধ্যম। তাই social media ban তাদের জীবনযাত্রায় মারাত্মক প্রভাব ফেলেছে।
রক্তাক্ত সংঘর্ষ ও সরকারি দমন-পীড়ন
Nepal Gen Z protests শান্তিপূর্ণভাবে শুরু হলেও বিকেলে পরিস্থিতি উত্তপ্ত হয়ে ওঠে। বিক্ষোভকারীরা সংসদ ভবনের নিষিদ্ধ এলাকায় প্রবেশের চেষ্টা করলে পুলিশ টিয়ার গ্যাস, জল কামান এবং শেষে সরাসরি গুলিবর্ষণ করে।
পুলিশ মুখপাত্র শেখর খানাল বলেছেন, “বিক্ষোভকারীরা নিষিদ্ধ এলাকায় প্রবেশ করার পর টিয়ার গ্যাস ও জল কামান ব্যবহার করা হয়েছে”।
সংঘর্ষের ফলে কাঠমাণ্ডুর বেশ কয়েকটি এলাকায় কারফিউ জারি করা হয়েছে এবং সেনাবাহিনী মোতায়েন করা হয়েছে।
Gen Z আন্দোলনের বৈশিষ্ট্য ও আন্তর্জাতিক প্রসঙ্গ
এই Nepal Gen Z protests এর কয়েকটি অনন্য বৈশিষ্ট্য রয়েছে:
নেতৃত্বহীন আন্দোলন
প্রথাগত রাজনৈতিক দলের নেতৃত্বে নয়, বরং এটি একটি leaderless movement। ‘হামি নেপাল’ নামক একটি গ্রুপ এই আন্দোলনের সমন্বয় করেছে।
ডিজিটাল থেকে রাস্তায়
Social media এ শুরু হওয়া Nepo Kids ক্যাম্পেইন পরে রাস্তার আন্দোলনে রূপ নেয়। TikTok ও Reddit-এর মাধ্যমে সংগঠিত এই আন্দোলন ডিজিটাল যুগের প্রতিবাদের নতুন রূপ দেখিয়েছে।
আন্তর্জাতিক অনুপ্রেরণা

বাংলাদেশ ও শ্রীলংকার সাম্প্রতিক যুব আন্দোলনের সাফল্য নেপালের Gen Z কে অনুপ্রাণিত করেছে।
সরকারের প্রতিক্রিয়া ও ভবিষ্যৎ
যোগাযোগ মন্ত্রী পৃথ্বী সুব্বা গুরুং বলেছেন, social media ban “জাতীয় মর্যাদা” ও নিয়ন্ত্রণের বিষয়। তিনি দাবি করেছেন যে সরকার কূটনৈতিক চ্যানেলের মাধ্যমে আলোচনার চেষ্টা করেছিল কিন্তু কোম্পানিগুলো সাড়া দেয়নি।
তবে বিরোধী নেতা ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী পুষ্প কমল দাহাল ‘প্রচণ্ড’ social media ban তুলে নেওয়ার দাবি জানিয়েছেন।
মানবাধিকার ও ডিজিটাল স্বাধীনতার প্রশ্ন
ডিজিটাল রাইটস নেপালের নির্বাহী পরিচালক সন্তোষ সিগদেল বলেছেন, “Social media বন্ধ করা একটি কঠোর পদক্ষেপ। এটি সামাজিক, অর্থনৈতিক, সাংস্কৃতিক ও সাংবিধানিক অধিকারের উপর প্রভাব ফেলবে”।
আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংগঠনগুলোও নেপাল সরকারের দমনমূলক পদক্ষেপের নিন্দা করেছে।
অর্থনৈতিক প্রভাব ও Remittance সংকট
Social media ban নেপালের অর্থনীতিতে ব্যাপক প্রভাব ফেলবে। ডিজিটাল অর্থনীতি, ই-কমার্স ও content creators দের আয় বন্ধ হয়ে গেছে। Facebook সম্প্রতি নেপালে মনিটাইজেশন প্রোগ্রাম চালু করেছিল, যা এখন স্থগিত।
বিশেষজ্ঞরা আশঙ্কা করছেন যে এই নিষেধাজ্ঞা প্রবাসী নেপালিদের পরিবারের সাথে যোগাযোগ বিঘ্নিত করবে এবং remittance প্রবাহে নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে।
Gen Z এর দাবি ও সরকারের চ্যালেঞ্জ
Nepal Gen Z protests এর মূল দাবিগুলো হলো:
- Social media ban তৎক্ষণাৎ প্রত্যাহার
- সরকারি দুর্নীতির বিরুদ্ধে কার্যকর পদক্ষেপ
- যুব বেকারত্ব সমাধানে কর্মসূচি
- রাজনৈতিক পরিবারের বিশেষ সুবিধা বন্ধ
কাঠমাণ্ডুর মেয়র বালেন শাহ ও বিভিন্ন সেলিব্রিটি এই আন্দোলনের পক্ষে সমর্থন জানিয়েছেন, যা আন্দোলনের ভিত্তি আরও শক্তিশালী করেছে।
আন্দোলনের ভবিষ্যৎ গতিপথ
এই Nepal Gen Z protests কেবল নেপালের জন্যই নয়, বরং দক্ষিণ এশিয়ার তরুণ রাজনীতির জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ মাইলফলক। ডিজিটাল যুগে তরুণদের রাজনৈতিক চেতনা ও প্রতিবাদের নতুন ধরন এটি।
সরকার যদি social media ban প্রত্যাহার না করে এবং দুর্নীতির বিরুদ্ধে কার্যকর পদক্ষেপ না নেয়, তাহলে এই আন্দোলন আরও বড় আকার ধারণ করতে পারে। নেপালের রাজনৈতিক ভবিষ্যৎ অনেকাংশে এই Gen Z প্রজন্মের ওপর নির্ভর করছে।Nepal Gen Z protests প্রমাণ করেছে যে আজকের তরুণ প্রজন্ম অন্যায়ের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াতে প্রস্তুত। তাদের social media কেড়ে নিয়ে নীরব করা যাবে না – বরং তা আরও বড় বিদ্রোহের জন্ম দেবে।
1 Comment
Looks like the protests in Nepal are gaining huge attention right now. The people seem really determined to raise their voices, and the government’s response will be crucial in shaping what comes next. ✊🇳🇵 #NepalProtests #VoiceOfThePeople